সুরা নাস এবং ভবিষ্যৎ প্রযুক্তি

সুরা নাস পবিত্র কোরআনের সর্বশেষ সূরা। এই সূরাতে মহান আল্লাহ তায়ালা মানুষকে তার রবের সহযোগিতায় শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে পরিত্রাণ পাবার জন্য মানুষকে সর্বদায় চেষ্টা করে যেতে বলেছেন। সূরা নাস এর বঙ্গানুবাদ নিম্নে দেয়া হলঃ
১। বলুন, আমি আশ্রয় গ্রহণ করিতেছি মানুষের পালনকর্তার,
২। মানুষের অধিপতির,
৩। মানুষের মা'বুদের,
৪। তার অনিষ্ট থেকে, যে কুমন্ত্রণা দেয় ও আত্নগোপন করে,
৫। যে কুমন্ত্রণা দেয় মানুষের অন্তরে
৬। জ্বিনের মধ্য থেকে অথবা মানুষের মধ্য থেকে।    

বর্তমান-এ যে রকম আলোচনা হয়ঃ  
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের তিনটি গুনের মাধ্যমে ( ১। রব, ২। ইলাহ, ৩। মা'বুদ ) শয়তান যে মানুষের মনের ভিতরে কুমন্ত্রণা দেয় তার থেকে পরিত্রাণ পেতে হবে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের এবাদত করতে হবে, সর্বদায় তাকে স্মরণ করতে হবে, তার জন্য মানুষের মনের ভিতরে খোদাভীতি নিয়ে আনতে হবে। এই ব্যাপারে আমাদের প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন সাহাবীদেরকে উদ্দেশ্য করেঃ তোমাদের সবার মধ্যে শয়তান সর্বদায় কুমন্ত্রণা দেয়, সাহাবীরা জিজ্ঞেস করলঃ হে আল্লাহর রাসুল! শয়তান কি আপনাকে ও কুমন্ত্রণা দেয়? আল্লাহর রাসুল ( ছাঃ ) বললেন, হ্যাঁ কিন্তু আল্লাহ তায়ালা আমাকে সেই প্রতিরোধ ক্ষমতা দিয়েছেন।
রাসুল (ছাঃ) আরও বলেনঃ নিশ্চয় শয়তান মানুষের শরীরে রক্তের মত প্রবাহমান। ( বুখারীঃ ৭১৭১, বই নংঃ৭৩ হাদিছ নংঃ ৩৫)
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সূরা বাকারায় বলেছেনঃ 'শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু এবং শয়তান আগুনের তৈরি।'

আমরা যারা মুসলিম তারা এই আয়াতগুলোর ব্যখ্যা ছোট থেকে এইভাবে শিখে এসেছি যে, শয়তান মানুষের রগে রগে বিচরন করতে পারে এবং করে। এই জন্য আমরা সবাই আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে সর্বদায় শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে পানাহ চেয়ে এসেছি এবং চাই। আর আজীবন চাইতে থাকব। আবার উপরোল্লেখিত হাদীছে বলা হয়েছে যে, রাসুল (ছাঃ) কে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন শয়তানের সব ধরণের কুমন্ত্রণা প্রতিরোধ করার ক্ষমতা দিয়েছেন। এর অর্থ এই যে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এই পৃথিবীতে যে কোন সমস্যা দিয়ে দিলে তার প্রতিষেধকও দিয়ে বলে দিয়েছেন যে, তোমারা (মানুষরা) এর সমাধান গবেষণা ও চিন্তার মাধ্যমে বের কর। এখন আমাদের কাজ কি? এর প্রতিষেধক এর ব্যপারে চিন্তা করা না কি এই বলে বয়ান বাজি করা যে, শয়তান থেকে বিরত থাক, শয়তানের কাজ কর না, অথচ শয়তান আপনার রক্তে চলাচল করতে পারছে, বিধায় আপনার মস্তিস্ক তথা আপনার চিন্তা শক্তিকে প্রভাবিত করছে। এর ফলে যেই টা হচ্ছে যে, যদি শয়তান মনে করে আপনাকে নিয়ন্ত্রন করবে অবশ্যই সে নিয়ন্ত্রন করতে পারবে এবং আপনাকে বিপথে পরিচালনা করবে আমরা যতই নামাজ কালাম পরি না কেন, কোন কিছুই কোন কাজে আসবে না। এর থেকে পরিত্রাণ পাবার উপায় কি? চিন্তা করুন...............

অনেক চিন্তা করে দেখলাম যে, একমাত্র কোরআন ও ছহীহ হাদীছ থেকে বুঝতে পারি যে, এই পৃথিবীতে একমাত্র আমাদের রাসুল(ছাঃ) কেই আল্লাহ রাব্বুল আলামীন শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে বাচার প্রযুক্তি শিখিয়ে দিয়েছেন আর রাসুল (ছাঃ) আমাদেরকে সেই প্রযুক্তি উদ্ভাবন করার জন্য বার বার বিভিন্ন সময়ে সাহাবীদের মাধ্যমে বলে দিয়েছেন। এখন আমাদের কি উচিত নয় সেই প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা। নাকি তাকিয়ে দেখব যে, ইয়াহুদী খ্রিষ্টান রা কবে এই প্রযুক্তি উদ্ভাবন করবে আর তারপর আমরা বলব যে, এইটা তো আমাদের কোরআনের মধ্যেই আছে সুতরাং কোরআনের মধ্যেই আছে একমাত্র বিজ্ঞান।

সুরা নাসের মধ্যকার প্রযুক্তিঃ ওয়াস ওয়াসা বা কম্পাংক, ফুঁ ইংরেজিতে যাকে বলা হয় ফ্রিকোয়েন্সি। এই কম্পাংক আমাদের মন মস্তিস্ককে খুব সুন্দর ভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে, কিভাবে? মনে করুণ আপনি খুব রোদের মধ্যে হেটে অনেক ক্লান্ত হয়ে পরেছেন, এই রৌদ্রময় সময়ে গরম বাতাসে যে ফ্রিকোয়েন্সি বা কম্পাংক ছিল তা আপনাকে প্রতিনিয়ত ক্লান্তিময় করে তুলেছে। আবার একটু পরেই দেখলেন যে একটা বিশাল বট গাছ সেইখানে গিয়ে বসতেই আপনার শরীর, মন ও মস্তিষ্ক খুব শীতল ও ঠাণ্ডা হয়ে গেল নিমিষেই। আপনি ঐখানে বসে কত সুন্দর সুন্দর চিন্তা ভাবনা করছেন কিন্তু একটু আগেই আপনি শুধু একটাই চিন্তা করেছেন যে, কখন আপনি একটু ছায়া পাবেন? আর কোন চিন্তা আপনার মাথায় ঘুরপাক করে নাই। এইখানে কিন্তু আপনার চিন্তাধারা সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে। বুঝতে পারছেন না আরেকটি উদাহরণ দেই, শীত প্রধান দেশ হীম ঠান্ডা বাতাস সেইখানে ফিরকোয়েন্সি বা কম্পাংক কিন্তু আলাদা আপনার কাজগুলি কি হবে? আপনি কিভাবে এই শীত থেকে বাচতে পারবেন, কিভাবে পোশাক সংগ্রহ করবেন, কিভাবে নিজেকে গরম করবেন? এইগুলি হবে আপনার প্রধান কার্যাবলী এর পাশাপাশি আর অন্যান্য কাজও করবেন।তবে আপনাকে অধিকাংশ সময়ে শীত কমানোর চিন্তায় মগ্ন থাকতে হবে। আবার আরেকটু খেয়াল করলে আপনি বুঝতে পারবেন যে, গরম প্রধান অঞ্চলের লোকজন এর মেজাজ একটু বেশি খিট খিটে হয়। কারন তাদের ব্রেইন সেই ধরনের সিগ্ন্যাল প্রোসেস করে। আর এই সিগ্ন্যালটা প্রোসেসিং হয়ে যে বার্তা বা সংবাদ পায়, তা দিয়ে সে তার মনকে নিয়ন্ত্রন করে। আর এই কারনে গরম অঞ্চলের লোকজনের মেজাজ খিট খিটে হয় আর শীত প্রধান অঞ্চলের লোকজনের মেজাজ অনেক শান্ত হয়।

তাহলে প্রশ্ন হল শয়তান কিভাবে ওয়াস ওয়াসা সৃস্টি করে? শয়তান আল্লাহর কাছ থেকে সেই ক্ষমতা চেয়ে নিয়েছে যাতে করে যে কোন ধরনের ফ্রিকোয়েন্সি উতপন্ন করে মানুশের মঙ্কে নিয়ন্ত্রন করতে পারে। এখন কেউ জদি নামায পরতে থাকে তবে তার মনের মধ্যে নানাধরনের চিন্তা ভাবনার উদয় হয় ক্যামনে? শয়তান সেই ধরনের একটা সিগন্যাল তইরি করে প্রিথিবিতে পাঠিয়ে দিচ্ছে আর মানুশের মস্তিশক সেই সিগ্ন্যাল নিয়ে হর হামেশায় বিপথগ্রস্থ হচ্ছে।

পরিত্রান পাবার উপায়ঃ প্রযুক্তির উন্নয়নে আমরাও এখন বিভিন্ন আউটপুটের সিগ্ন্যাল উতপন্ন করতে শিখেছি। যদি উতপন্ন করতে পারি তাহলে কেন বাধা দিতে পারব না? অবসশ্যি পারব।

এই রকম একটা প্রযুক্তি যদি আমরা তইরি করতে পারি তবে আমাদের হাতে থাকবে গোটা প্রিথিবির রাজত্ত। আমরা যে কোন মানুশের মঙ্কে নিয়ন্ত্রন করতে পারব। আবার খারাপ দিক হল যদি এই প্রযুক্তি এমন কারও কাছে চলে যায় যে শয়তানের অনুচর তবে তো আবার অরাজোকতায় ভরে যাবে এই প্রিথিবী। এই জন্য আমাদের সকলকে প্রযুক্তি নিয়ে গবেশনার পথ উন্মোচন করতে হবে এবং বেশি বেশি চর্চা করতে হবে। যাতে করে আমাদের প্রযুক্তিগুলো আমরাই তইরি করতে পারি।
 

Comments

  1. সুন্দর একটা পোস্ট ভাইয়া। আল্লাহ সর্বশক্তিমান, আমরা তার আশ্রয়েই বেঁচে আছি।

    ReplyDelete
    Replies
    1. thanks a lot, May Allah bless you

      Delete

Post a Comment

Popular posts from this blog

composer installation on aws ec2 instance ami ubuntu 18.04

nginx installation on aws ec2 instance ami ubuntu 18.04

PHP7.3 installation on aws ec2 instance ami ubuntu 18.04